টার্টল ট্রেডিং একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং কার্যকর ট্রেডিং কৌশল যা ১৯৮৩ সালে রিচার্ড ডেনিস (Richard Dennis Turtle Trading Strategy) এবং তার সহযোগী উইলিয়াম একহার্ট (William Eckhardt) উদ্ভাবন করেন। এটি একটি সিস্টেম্যাটিক ট্রেডিং পদ্ধতি যা সম্পূর্ণরূপে প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করে তৈরি। এই কৌশলটির মাধ্যমে, ট্রেডাররা বাজারের চলমান ট্রেন্ডের দিকে মনোযোগ দিয়ে লাভের সুযোগ তৈরি করতে পারে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে অনেক সাধারণ ব্যক্তি শেয়ার বাজারে সফল হতে সক্ষম হয়। এই পৃষ্ঠার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন টার্টল ট্রেডিং কী, এর উদাহরণ, কৌশল, সুবিধা, অসুবিধা এবং সীমাবদ্ধতা, এর বৈধতা এবং সতর্কতা সম্পর্কে।
টার্টল ট্রেডিং হল একটি ট্রেডিং কৌশল যা রিচার্ড ডেনিস এবং উইলিয়াম একহার্টের গবেষণা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে উদ্ভাবিত হয়। তারা বিশ্বাস করতেন যে ট্রেডিং কোনো বিশেষ প্রতিভার ব্যাপার নয়; বরং এটি একটি সিস্টেম্যাটিক পদ্ধতিতে শেখা সম্ভব। তাদের লক্ষ্য ছিল সাধারণ মানুষকে ট্রেডিং শিখানো এবং সেই পদ্ধতিতে কাজ করার জন্য একটি নির্দিষ্ট সিস্টেম প্রদান করা।
টার্টল ট্রেডিং সিস্টেম (Turtle Trading System) মূলত ট্রেন্ড ফলোইং সিস্টেম, যেখানে ট্রেডাররা বাজারের বড় ট্রেন্ডের দিকে মনোযোগ দেয় এবং সেই অনুযায়ী ট্রেড করে। এই কৌশলে মূলত দুটি প্রধান সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করা হয়: একটি হচ্ছে বাজারের প্রবণতা শনাক্ত করা এবং দ্বিতীয়টি হল সেই প্রবণতার সাথে তাল মিলিয়ে ট্রেড করা।
টার্টল ট্রেডিং কৌশলটি খুবই সহজ এবং সোজা, তবে এটি নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করে কাজ করে। এই কৌশলের মূল উদ্দেশ্য হলো বাজারের বড় প্রবণতার দিকে মনোযোগ দেওয়া এবং সেই প্রবণতার সাথে মিলিয়ে অবস্থান গ্রহণ করা। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু মূলনীতি হলো:
ট্রেন্ড ফলোিং: এই কৌশলটি মূলত বাজারের বড় ট্রেন্ড অনুসরণ করে। যখন বাজারে একটি বড় ট্রেন্ড চলমান থাকে, তখন ট্রেডাররা সেই ট্রেন্ডের দিকে ট্রেড করেন।
পজিশন সাইজিং: কিভাবে ট্রেডের আকার ঠিক করবেন, তা নির্ধারণ করা হয়। এটি ট্রেডারকে যথাযথ ঝুঁকি নেয়ার জন্য সাহায্য করে।
এন্ট্রি এবং এক্সিট পয়েন্ট: এই কৌশলে নির্দিষ্ট এন্ট্রি এবং এক্সিট পয়েন্ট থাকে যা বাজারের মূল প্রবণতার দিকে নজর রেখে নির্ধারণ করা হয়।
স্টপ লস ও টেক প্রফিট: টার্টল ট্রেডিং সিস্টেমে স্টপ লস এবং টেক প্রফিট ব্যবহার করা হয় যাতে ঝুঁকি কমানো যায় এবং লাভ নেওয়া যায়।
ধরা যাক, একজন ট্রেডার একটি স্টক মার্কেটে ট্রেড করছেন এবং বাজারে একটি বড় প্রবণতা শুরু হয়েছে। টার্টল ট্রেডিং সিস্টেম অনুসারে, ট্রেডার স্টকটি কেনার সিদ্ধান্ত নেন যখন স্টকটি একটি নির্দিষ্ট মূল্য রেঞ্জ ছুঁয়ে যায় এবং বাজারের প্রবণতা উপরের দিকে যাচ্ছে। স্টপ লস সিস্টেম ব্যবহার করে, তিনি একটি নির্দিষ্ট পয়েন্টে ক্ষতির সীমা ঠিক করে দেন যাতে বড় ক্ষতি এড়ানো যায়। লাভের পয়েন্টও আগে থেকেই ঠিক করা থাকে যাতে তিনি বাজারের উপযুক্ত সময়ে লাভ নিতে পারেন।
সিস্টেম্যাটিক পদ্ধতি: টার্টল ট্রেডিং কৌশলটি খুবই সিস্টেম্যাটিক, যা ট্রেডারদের সহায়তা করে। এই সিস্টেমে কোনো আবেগ বা অনুমান নেই, বরং সব কিছু নিয়মের মধ্যে পরিচালিত হয়।
ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ: পজিশন সাইজিং এবং স্টপ লস ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
বাজারের ট্রেন্ড ফলো করা: যেহেতু এই কৌশলটি ট্রেন্ড ফলোইং, এটি বাজারের বড় সুবিধা নিয়ে আসতে পারে যখন বাজারে একটি শক্তিশালী প্রবণতা চলছে।
বাজারের ট্রেন্ড না থাকলে ফলস্বরূপ: এই কৌশলটি মূলত ট্রেন্ড ফলো করে, তাই যদি বাজারে কোনো ট্রেন্ড না থাকে তবে এটি কার্যকরী নাও হতে পারে।
ঝুঁকি: যদিও সিস্টেমটি ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, তবুও অতিরিক্ত ঝুঁকি নেওয়ার সম্ভাবনা থাকে যদি সঠিকভাবে পজিশন সাইজিং বা স্টপ লস ব্যবহার না করা হয়।
পুনরাবৃত্তি: অনেক সময় ট্রেডারদের একাধিক ট্রেড করতে হয় এবং প্রতিটি ট্রেডে লাভ অথবা ক্ষতি হয়। তবে পুনরাবৃত্তি ঘটাতে হতে পারে।
হ্যাঁ, টার্টল ট্রেডিং পুরোপুরি বৈধ। এটি একটি ট্রেডিং কৌশল, এবং বৈধ অর্থনীতির মধ্যে এটি ব্যবহার করা যায়। তবে, ট্রেডিংয়ের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি। যদি কেউ এই কৌশল অনুসরণ করতে চান, তাহলে তাকে নিয়মিত বাজার গবেষণা এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা করতে হবে।
টার্টল ট্রেডিং কৌশলটি কী?
এই কৌশলটি ব্যবহার করতে কি বিশেষ দক্ষতা লাগে?
টার্টল ট্রেডিং কি শুধু শেয়ার বাজারে ব্যবহার করা যায়?
টার্টল ট্রেডিংয়ের সেরা সুবিধা কী?
টার্টল ট্রেডিং কৌশল কি লাভজনক?
আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল ফাইন্যান্স সংক্রান্ত তথ্য শুধুমাত্র সাধারণ জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য। এটি কোনো বিনিয়োগ বা আর্থিক পরামর্শ নয়। বিনিয়োগের আগে অবশ্যই একজন যোগ্য আর্থিক পরামর্শদাতার পরামর্শ নিন। এই ওয়েবসাইটের কোনো কন্টেন্ট বা তথ্যের ভুল বা ত্রুটির কারণে সৃষ্ট কোনো ক্ষতির জন্য আমরা দায়ী নই। ওয়েবসাইটে থাকা লিঙ্কগুলির মাধ্যমে তৃতীয় পক্ষের ওয়েবসাইটে প্রবেশের ফলে সৃষ্ট কোনো সমস্যা বা ক্ষতির জন্যও আমরা দায়বদ্ধ নই।
Copyright © 2024-2025 Koti Takar Kotha(কোটি টাকার কথা). All Rights Reserved.
Uma Roy (উমা রায়)
উমা রায় একজন অভিজ্ঞ লেখক এবং আর্থিক সচেতনতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নিবেদিতপ্রাণ। তিনি "কোটি টাকার কথা" ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা, যেখানে আর্থিক ব্যবস্থাপনা, বিনিয়োগ, শেয়ার বাজার, মিউচুয়াল ফান্ড, সোনার বন্ড, এবং ব্যাঙ্ক পরিষেবা নিয়ে সহজবোধ্য তথ্য শেয়ার করা হয়। তার লক্ষ্য হলো আর্থিক বিষয়ে সাধারণ মানুষের ভীতি দূর করে জটিল ধারণাগুলোকে সহজ ভাষায় উপস্থাপন করা। উমার লেখায় প্রতিফলিত হয় তার বিশ্বাস যে সঠিক জ্ঞান এবং সচেতনতার মাধ্যমে আর্থিক স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব।
"কোটি টাকার কথা" ব্লগের মাধ্যমে তিনি বাংলাভাষী মানুষের জন্য একটি সহজলভ্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছেন, যা আর্থিক শিক্ষার অভাব পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। উমা রায়ের অনুপ্রেরণামূলক লেখাগুলি পড়ে আর্থিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসী হন এবং আপনার ভবিষ্যৎকে আরও শক্তিশালী করুন।